আগামী ২৯ জুলাই মুক্তি পেতে যাচ্ছে মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত সিনেমা ‘হাওয়া’। এই সিনেমার একটি গান ‘সাদা সাদা কালা কালা’, যা ইতিমধ্যেই নেটদুনিয়া মাতাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আলোচনায় এসেছে এই গানের স্রষ্টা হাশিম মাহমুদের নামও।
কিন্তু কে এই হাশিম মাহমুদ? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাশিম মাহমুদ পেশাদার কোনো গীতিকার ও সুরকার নন। মনের খেয়ালে গান করেন তিনি। অপরিচিত এই শিল্পী নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, টিএসসি, ছবির হাটের পরিচিত মুখ ছিলেন।
শাহবাগের আড্ডায় গানটি নিয়মিত গাইলেও এবার ‘হাওয়া’ সিনেমার সুবাদে শাহবাগ ছাপিয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তার নাম। ৫০ -এর উপর বয়সের এই শিল্পী অনেকটা নিভৃতে বাস করেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার তল্লা সবুজবাগ এলাকায়।
নারায়ণগঞ্জ শহরে বেড়ে উঠলেও যৌবনের বড় একটি সময় কাটিয়েছেন ঢাকাতে। নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় তার ভরাট কণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু গানে নয় কথাতেও মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন তিনি।
‘শাপলা’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন হাশিম মাহমুদ। যাতায়াত ছিল স্থানীয় সংগীত বিদ্যালয় জয়জয়ন্তী জলসায়। পরে ঢাকার চারুকলা, মোল্লার দোকান, ছবির হাট, পাবলিক লাইব্রেরি ও শাহবাগ হয়ে ওঠে তার বিচরণক্ষেত্র।
এক সময় ‘বৈরাগী’ নামে একটি গানের দলও করেছিলেন তিনি। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আবুল হাশেম ও জমিলা আক্তার দম্পতির সাত সন্তানের তৃতীয় হাশিম মাহমুদ। শারীরিক ও মানসিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেননি।
বর্তমানে মায়ের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে থাকেন তিনি। বাসায় প্রতিদিন খাতা-কলম নিয়ে বসে পড়েন লি। নিজের ঘরে পাতা মলিন চাঁদরে মোড়ানো খাটের উপর স্তূপাকারে লেখার খাতা। সেই খাতায় মৌলিক গান লেখার পাশাপাশি রবীন্দ্র, নজরুল ও লালন গীতি লিখে রেখেছেন।
সারাক্ষণ এই ঘরেই পড়ে থাকেন। বাইরে বের হন না। তার শিল্পকর্মের নানান জায়গায় ব্যবহার নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে পরিবারের লোকজনের। হাশিম মাহমুদের লেখা অনেক গান বিনা অনুমতিতে অনেকে ব্যবহার করেছে বলে দাবি তাদের।
ন্যূনতম সম্মানীও তাকে দেয়া হয়নি। অনেকেই আবার নামমাত্র সম্মানী দিয়ে লেখা ব্যবহার করেছেন। তবে যশ বা টাকা-পয়সা নিয়ে কখনও মাথা ঘামাননি হাশিম মাহমুদ। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মানসিক সমস্যার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও অসুস্থ এই শিল্পী।
তিন বছর আগে চিকিৎসা করানো হয়েছিল। হাশিম মাহমুদের মা জানান, এক মেয়ের সাথে লালন ফকিরের আখড়ায় গিয়েছিল। ওই মেয়েরে বিয়ে করার কথা ছিল। সেই মেয়ের সঙ্গে আর বিয়ে হয়নি। এরপরই আরও আউলাইয়া গেছে।
নীরবে-নিভৃতে কালের অন্ধকারে তিনি হারিয়ে যাচ্ছিলেন ‘হাওয়া’ সিনেমায় চলচ্চিত্র নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন তার গানটি নেন; গানটিতে তার কণ্ঠ দেয়ার কথা থাকলেও শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দিতে পারেননি।
এর আগে হাশিম মাহমুদের কণ্ঠে ‘তোমায় আমি পাইতে পারি বাজি’ গানটি সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।